চাঁদপুর, রবিবার, ৪ জুন ২০২৩, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১৪ জিলকদ ১৪৪৪  |   ৩৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতি শিক্ষা স্বাস্থ্য সারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ১৭ জুন জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন না করতে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সর্বোচ্চ চেষ্টা
  •   বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহীদের উদ্ভাবক হিসেবে তৈরি করতে হবে : জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান
  •   একদিনের ব্যবধানে ৪ মেয়ে শিশুর মৃত্যু : এবার আশিকাটিতে পুকুরে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু
  •   ফরিদগঞ্জে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ আটক তিন
  •   ২৮৬ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিলো হাজীগঞ্জ পৌরসভা

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

মেঘনায় মাছের মড়ক খুবই উদ্বেগজনক
অনলাইন ডেস্ক

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘কারখানার বর্জ্য নদীতে মিশে মাছের মড়ক ॥ মেঘনা নদীর তীরে পচা মাছের দুর্গন্ধ’ শীর্ষক সংবাদটিতে উদ্বিগ্ন হয়েছে চিন্তাশীল পাঠকমাত্রই। কারণ, মেঘনা দেশের এমন বড়ো একটি নদী, যেটি মিঠা পানির উৎকৃষ্টতায় বিশ্বে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে এবং বিশ্বখ্যাত আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের বিচরণের কারণে অনন্য অবস্থানে রয়েছে। সে নদীটির পানিই যদি বিবিধ বর্জ্য দ্বারা দূষিত হয়ে যায়, তাহলে মেঘনা অববাহিকার বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনে যে কতোটা বিরূপ প্রভাব পড়বে সেটা ভাবতে গেলেও শিহরিত হতে হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠের মতলব উত্তর ব্যুরো ইনচার্জ মাহবুব আলম লাভলু তাঁর পরিবেশিত সংবাদটিতে লিখেছেন, ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল এই দুই মাস মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম থাকায় মাছ ধরা ও বিক্রি করা নিষেধ। ঠিক সেই মুহূর্তেই মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে থাকা মাছ এবং মাছের পোনা মরে যাচ্ছে। নদীর তীরে পচা মাছের দুর্গন্ধ। নদীর পাড়ের লোকজন গোসলসহ দৈনন্দিন কাজ করতে পারছে না কেউ। গত এক সপ্তাহে প্রায় কয়েক টন দেশি চেউয়া মাছ ও পোনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ মরে গেছে। স্থানীয় মৎস্য বিভাগের দাবি, আশপাশের শিল্পকারখানাগুলো নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলছে। স্থানীয় লোকজন হাটবাজার ও বাসাবাড়ির আবর্জনাও নদীতে ফেলছেন। ফলে পানি দূষিত হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পাশের ষাটনল ইউনিয়নের জেলেপাড়া, বাবুবাজার, সটাকী, বাহাদুরপুর এলাকার পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এখানে পানি নষ্ট হয়ে কালো রং ধারণ হয়ে গেছে এবং চোখে পড়ে ফেনাযুক্ত পানি। মেঘনার পানিতে মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। জেলে প্রতিনিধি মহাবীর বর্মন জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানি কালো রং ধারণ করেছে। বিষাক্ত পানিতে টিকতে না পেরে মাছ মরে ভেসে উঠছে। সুখরঞ্জন বর্মন, ইমাম হোসেন, প্রদীপ বর্মন, সুভাষ বর্মনসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলার কারণে মতলব উত্তর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছে। গত ক’দিন ধরে শত শত লোকজন মৃত মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত ক্যামিক্যালযুক্ত পানি মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসায় ছোট-বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার নদীর পানি এখানে প্রবেশ করেছে। এক সপ্তাহ ধরে নদীর পানির রং বদলে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন কারখানার দূষিত বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি দূষিত হয়ে রং পরিবর্তন করেছে। দূষিত পানির কারণে পানির পিএইচ ও অ্যামোনিয়া মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় নদীতে থাকা বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, মাছের পোনা ও জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে নদীর ষাটনল এলাকায় কয়েক টন মাছ মরে গেছে। মাছগুলো মরে ভেসে গেছে এবং নদীর পাড়ে জমাট হয়ে পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম জানান, মাছ মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হবে। বর্জ্যরে কারণে নদীর পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে ভেসে ওঠেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, খবর পাওয়ার পর পরই সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে নদীর অবস্থা দেখতে পাঠিয়েছি। দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই পানি বুধবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমাকে কিছুক্ষণ আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী রোববার সরেজমিন পরিদর্শন করে পানির নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।

প্রায় ৪০০ বছর আগে যে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠেছিল, যে বুড়িগঙ্গা ছিলো রাজধানীর লাইফ লাইন, বিবিধ বর্জ্যরে কারণে সে বুড়িগঙ্গা এখন চরমভাবে দূষিত দুর্গন্ধময় একটি নদী। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বালু, তুরাগ, শীতলক্ষ্যাও একই পরিণতির শিকার। পরিবেশবাদীরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে সরকারকে করণীয় নির্ধারণের জন্য বললেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

আর ইলিশ গবেষকসহ মৎস্য বিজ্ঞানীরা এসব নদীর বর্জ্য যে একসময় মেঘনাতেও এসে যাবে এবং ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদনকে ব্যাহত করবে সে ব্যাপারে আশঙ্কা ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সরকার ও তার সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঔদাসীন্য প্রদর্শন ও নীরবতা পালন করেই চলছে। যে কারণে ইলিশ গবেষকদের আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। ইলিশের অভয়াশ্রম চলাকালে মেঘনার মতলব উত্তর এলাকায় বর্জ্য-দূষিত পানির প্রাবল্যে দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সাম্প্রতিক মাছের মড়কই তার প্রমাণ। অতএব, আর কালবিলম্ব নয়, বর্জ্য দূষণ থেকে দেশের নদীগুলোকে রক্ষায় সরকারকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতেই হবে। এর যে কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়